বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

আমতলীতে গুঁড়িয়ে দেওয়া সেই পাঁচ ইট ভাটা ফের চালু

আমতলীতে গুঁড়িয়ে দেওয়া সেই পাঁচ ইট ভাটা ফের চালু

dav

আমতলী উপজেলার আঠারগাছিয়া, কুকুয়া ও চাওরা ইউনিয়নে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা ৫ ড্রাম চিমনির ইট ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কয়েক দিন পর ফের চালু করা হয়েছে।

প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এগুলো দেখেও না দেখার ভান করছেন। অবৈধ এ ভাটাগুলোতে করাত কল বসিয়ে দেদারছে পোরানো হচ্ছে কাঠ।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার আঠার গাছিয়া ইউনিয়েনর রায়বালা গ্রামের মাহবুব মৃধা এমএমবি , খাকদান গ্রামের মধু প্যাদা ফাইভ স্টার ব্রীকস,

কৃষ্ণনগর গ্রামের মো. আবুল হোসেন এএমবি, ইব্রাহিমপুর গ্রামে মো. মন্টু এমএসবি ও কাউনিয়া গ্রামে মো. ইসমাইল হোসেন মাস্টার জেবিবি ইট ভাটা কৃষি জমি ব্যবহার করে আবাসিক এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের লাইসেন্স ছাড়া ড্রাম চিমনির ইটভাটা চালু করেন।

এসল ভাটায় অবৈধ করাত কল বসিয়ে দেশীয় এবং বনের বিভিন্ন প্রজাতির চোরাই কাঠ এনে তা চেরাই করে দেদারছে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গুড়িয়ে দেওয়া ভাটা গুলো চালু করে তাতে ইট পোরানো হচ্ছে। ড্রাম চিমনির এসকল ভাটায় ইট পোরানোর জন্য ভাটার মধ্যেই বসানো হয়েছে অবৈধ করাত কল।

করাত কলে কাঠ চেরাই করে তা দিয়ে পোরানো হচ্ছে ইট। শ্রমিকরা কেউ কেউ মাটি তৈরী করছে ইট বানানোর জন্য, কেউ বা ভাটায় পোরানোর জন্য ইট সাজিয়ে দিচ্ছে।

আবার কয়েকটি ট্রলি দাড়িয়ে রয়েছে ইট পরিবহনের জন্য এভাবেই কাজ চলছে গুঁড়িয়ে দেওয়া পাঁচ ইট ভাটায়।

রায়বালা গ্রামের এমএমবি ব্রিকস এ সাংবাদিকের আগমনের খবর পেয়ে ম্যানেজার জসিম আগেই সটকে পরেন।

দুরে দাড়িয়ে কাজের তদারকি করছিল ভাটার এক অংশিদার আনোয়ার হোসেন মৃধা। সাংবাদিকরা তাকে কথা বলার জন্য ডাকলেও কর্নপাত না করে কাজ ফেলে দ্রুত পালিয়ে যান।

এসকল ভাটা গুলোতে সরকারী সকল নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গ্রামের ফসলি জমি দখল করে ভাটা নির্মান করা হয়েছে।

গ্রামের মধ্যে ফসলি জমি ব্যবহার করে ইট ভাটা নির্মান করায় রায়বালা, খাকদান, কৃষ্ণনগর, ইব্রাহিমপুর এবং কাউনিয়া গ্রামে দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়।

এসল গ্রামের ভাটার পাশের জমিতে এখন আর আগের মত ধান এবং রবি ফসল হয়না। ড্রাম চিমনির কারনে গাছ পালা এবং ঘড় বড়িতে ভাটার নির্গত ছাই জমে ফলজ এবং বনজ গাছ বিবর্ন হয়ে গেছে।

নারিকলে, আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ গাছে ফলন ধরেও তা শুকিয়ে যাচ্ছে। । কোন রকম প্রাণ নিয়ে দাড়িয়ে আছে গাছগুলো।

এছাড়া কৃষ্ণনগর গ্রামের এএমবি ব্রিকস এর পাশেই রয়েছে কুকুয়া আধর্শ মাধ্যমিক ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারী হাসপাতাল ও কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স।

ইব্রাহিমপুর গ্রামে এমএসবি ব্রিকস এর ১৫০মিটার দুরত্বেই রয়েছে ইব্রাহিমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

কাউনিয়া গ্রামের জেবিবি এর ১০০ মিটার দুরত্বেই রয়েছে কাউনিয়া সরকারী প্রাথমিক এবং কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

রায়বালা গ্রামের আকবর আলী বলেন, ‘ভাই গ্রামের মধ্যে ইট ভাটার লইগ্যা মোরা ধুলা বালি আর ছাই এ মইর‌্যা গেছি।

এহন আর বাড়িতে থাহন জায়না। ঠিকমত ঘুমান জায়না, গাছ পালায় ফল অয় না, জমিতে ধান নাই, ডাইল মরিচ আলুসহ রবি ফসল এহন আর মোরা চোহে দ্যাখতে পাই না।’

ইব্রাহিম পুর গ্রামের চানমিয়া বলেন, ‘ভাটার ছাইতে স্কুল অন্ধকার অইয়া যায়। ভাটার ছাই আর ধুলায় গ্রামের মানুষের হাচি কাঁশি আর শ্বাস কষ্ট দেখা দিয়েছে। ভাটায় মোগো সব শান্তি কাইর‌্যা লইয়া গ্যাছে।’

এসকল অভৈধ ভাটার সন্ধান পেয়ে গত ১০ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোজিনা আক্তারের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে ভাটা পাঁচটি ভেকু দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

একাজে সহায়তা করেন বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান সরকার এবং র‌্যাব -৮ এর পটুয়াখালী ক্যাম্পের সদস্যরা।

অভিযানের কিছু দিন যেতে না যেতেই উল্লেখিত পাঁচ ভাটার মালিকরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভাটাগুলো ফের চালু করেছে।

এখন স্থানীয় মানুষজনদের মধ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশান বড় না ইটভাটার মালিকদের ক্ষমতার দাপট বেশী?

রায়বালা গ্রামের এমএম ব্রীকস এর মালিক মাহবুব মৃধা গুঁড়িয়ে দেওয়া ভাটা চালুর কথা স্বীকার করে বলেন, সকলকে ম্যানেজ করেই চালু করেছি।

খাকদান গ্রামের ফাইভস্টার ব্রিকস এর মালিক মধু প্যাদা কাগজপত্র এবং লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে ভাটা চালু করেছেন এ প্রশ্নের কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি ।

এছাড়া গুঁড়িয়ে দেওয়া ভাটা কি ভাবে চালু করলেন এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে চাননি।

বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, অবৈধ এ ভাটাগুলোতে ফের অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, অবৈধ এ ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত পুন:আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech